বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামের কৃষক ফিরোজ মাতুব্বর (৪৮) ইউটিউব দেখে পতিত জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলার আবাদ করে সফল হয়েছেন। এ উপজেলায় তিনিই একমাত্র কমলা চাষি যিনি প্রথম কমলা আবাদ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। তার বাগানের শতাধিক গাছে থোকায় থোকায় কমলা ধরেছে। কমলা আকারে যেমন বড়, তেমন স্বাদেও খুব মিষ্টি। কমলা বাগানের প্রবেশমুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা হলুদ ও সবুজ রঙের কমলা। প্রতি থোকায় কমপক্ষে ১০টি করে কমলা ঝুলে আছে।
পাঁচ বছর আগে উপজেলার বেতমোর ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামে অনাবাদি ৩৩ শতাংশ জমিতে দার্জিলিং জাতের ১২০ টি কমলার চারা রোপণ করেন তিনি। ইতোমধ্যে প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৫০ কেজি করে কমলা ধরেছে। গতবছর ৩ লাখ টাকায় কমলা বিক্রি করলেও এ বছরে ৫-৭ লাখ টাকার কামলা বিক্রির আশা করেন।
কৃষক ফিরোজ মাতুব্বর দৈনিক প্রলয়কে জানান,তার বাবা মতিলাল মাতুব্বর একজন প্রান্তিক চাষি। তিনি ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিশ্রমে সহায়তা করতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে পৈত্রিক জমি আর হালের বলদ বিক্রি করে সৌদি আরবে যান ফিরোজ। সেখানে একটি সিমেন্ট কারখানায় কয়েক বছর কাজ করেন। অবসর সময় ইউটিউবে দেখে স্বপ্ন বুনেন দেশে ফিরে কমলার বাগান করবেন। সৌদি আরবে থাকার সময় কুষ্টিয়ার জীবনগরের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তার কাছ থেকে কমলা চাষের বিষয়ে প্রথম জানতে পারেন ফিরোজ। পরে তিনি কুষ্টিয়ার জীবননগরের ওমর ফারুক খানের নার্সারি থেকে ১০ হাজার টাকার কমলার চারা সংগ্রহ করেন। তার স্ত্রী নাসিমা বেগম প্রথমে বাগানের কাজ শুরু করেন। এখন তিন বছর ধরে ভালো ফলন পাচ্ছেন। কমলা চাষে খরচ কম লাগে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের দেখার জন্য কমলা গাছেই রেখে দিয়েছেন। খেতে দিচ্ছেন এ কমলা। ৩-৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
আরও পড়ুন
থানায় অভিযোগ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাদীসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত
নগরকান্দায় ইসলামী আন্দোলনের নেতার উপর গুলি করার অভিযোগ
ময়মনসিংহ ও বরিশালে নতুন বিভাগীয় কমিশনার
স্থানীয়রা জানান, যখন ফিরোজ মাতুব্বর কমলা চাষ শুরু করেন। তখন তার কাজটিকে অনেকেই পাগলামি বলেছেন। তার কাজটিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও গাছে কমলা দেখে সবাই অভিভূত। তিনি এখন এলাকার অনেকের অনুকরণীয় আদর্শ কমলা চাষি। তার সফলতা দেখে অনেক বেকার যুবক কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম দৈনিক প্রলয়কে জানান, বাগানের ফল খুব সুস্বাদু। মঠবাড়িয়ার ভিতরে এই একটি বাগান রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে দেখতে আসেন। কমলা বাগানটি করে আজ তিনি সফল। অল্প একটু জায়গার মধ্যে এত কমলা হয় তা আমার ধারণা ছিল না। তরুণ বেকার যারা রয়েছেন, তারা চাইলে এমন বাগান করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক চাষিকে আমরা কমলা চাষে উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চাষিদের দার্জিলিং জাতের কমলার চারা রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। এখন মঠবাড়িয়া উপজেলা কমলা চাষে একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় জায়গা।